নভেম্বর ২৪, ২০২৩
স্মৃতির_মাঝে (১ম খন্ড)
নিজের ১৮বছর বয়সী মেয়েকে বাঁচাতে মাত্র ৬বছর বয়সী মেয়ের হাতে খুনের অস্ত্র তুলে দিলেন নুহাশ জামান। মেঝেতে তার ১৮বছর বয়সী মেয়ে আরুশি রক্তমাখা হাতে বসে আছে। তার একহাত সামনেই পড়ে আছে ১৫বছর বয়সী একটা মেয়ের লাশ যাতে অত্যন্ত নির্মমভাবে ছুড়ি চালানো হয়েছে।
একটু দূরেই দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী আরশি জামান কাঁদছেন।
ছোট আয়ুশি পিটপিট চোখে আশেপাশের পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করছিলো। নুহাশ সাহেব আয়ুশি কে ডেকে নিয়ে বললেন,
>>শুন আম্মু। আমরা সবাই মিলে একটা গেইম খেলছি বুঝেছো?
>>কেমন গেইম বাপি? আর তুবা আপু এভাবে শুয়ে আছে কেনো? উনার গায়ে লাল লাল কেন?
>>শুন আম্মু বাপি বুঝিয়ে বলছি। তুবা আপু হলো আমাদের শত্রু। আমাদের গেইম হলো তুবা আপুকে মারা। তুবা আপুকে যে মারবে সে অনেক বড় গিফট পাবে। তুবা আপুকে কে মেরেছে জানো তোমার আপুই। আর বাপি চাই না তোমার আপুই গিফট টা পাক। তাই তুমি গিয়ে ওই ছুড়িটা হাতে নাও। কেউ জিজ্ঞাস করলে বলবা আমিই তুবা আপুকে মেরেছি। বুঝলে?
>>ওকে বাপি কিন্তু কি গিফট পাবো?
>>সেটা সারপ্রাইজ। তুমি কাউকে এটা বলোনা যে তুবা আপুকে তোমার আপুই মেরেছে। সবাইকে বলবা তুমি মেরেছো। নাহয় গিফট পাবেনা কিন্তু।
ছোট্ট আয়ুশি বাপির গালে খুশিতে আত্মহারা হয়ে চুমু খাই। তারপর দৌড়ে গিয়ে লাশের উপর থেকে ছুড়িটা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। কৌতূহলী হয়ে কিছুটা রক্ত হাতেও মেখে নেয়। আরশি জামান কান্নাই ফেটে পড়েন। নুহাশ সাহেব গলা খাকিয়ে বলেন,
>>তোমার বড় মেয়েকে নিয়ে গিয়ে পরিষ্কার করে দাও। আর বুঝিয়ে দাও। কেউ কিছু জানতে চাইলে বলবে আয়ুশিই করেছে এমন টা।
বলে নুহাশ সাহেব বেড়িয়ে যান ঘর থেকে। আরশি জামান বড় মেয়েকে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ করে দেয়। এরপর ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। যাতে ওর উপরে কারো সন্দেহ না পড়ে।
ছোট্ট আয়ুশি তুবার লাশটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আর বিড়বিড় করে বলছে,
>>দেখেছো তুবাপু আমরা জিতে গিয়েছি। এবার আমি গিফট পাবো। ইয়েএএহ কি মজা।
এমন সময় তুবার মা তুর্না বেগম হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে পড়েন ঘরে কাঁদতে কাঁদতে। তুবার লাশের পাশে ছোট আয়ুশিকে দেখে নিমিষেই যেন তিনি বরফের মত জমে যান।
তুবার মা মেয়ের লাশ জড়িয়ে বিলাপ করে কাঁদতে থাকেন। তা দেখে আয়ুশি ভ্রু কুঁচকাই। তুবার মায়ের কান্নার শব্দে আরশি জামান বেড়িয়ে আসেন। আশ্চর্য হওয়ার ভং ধরেন।
নুহাশ জামান ঘরে ঢুকতেই আয়ুশি ছুড়িটা ফেলে বাবাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। নুহাশ সাহেব মেয়েকে জড়িয়ে নিতেই আয়ুশি বাবার গলা জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। আর বলে,
>>বাপি ওরা কাঁদছে কেনো?
নুহাশ সাহেব বিড়বিড় করে মেয়ের কানে বলেন,
>>ওরা গেইমে হেরে গিয়েছে তো তাই কাঁদছে। তুমি কিন্তু বাপির কথামত সব বলবে কেমন,নাহয় গিফট পাবে না?
>>জি বাপি।
এই বিষয়টা নিয়ে বেশ ঝামেলা বাধে। তুবার মা না চাইলেও তুবার পরিবার মামলা করেন। তাদের সন্দেহ আরুশির উপর। কিন্তু ছোট্ট আয়ুশি জোরগলায় সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে যে, তুবাকে ও ই মেরেছে।
নুহাশ সাহেব ভেবেছিলেন হয়তো আয়ুশি ছোট বলে কোন শাস্তি হবেনা। কিন্তু কোর্ট আয়ুশি কে জুভেনাইল জেইলে রাখার আদেশ দেয় এক 'বছরের জন্যে।
নুহাশ সাহেব হতাশ হয়ে পড়েন, বড় মেয়েটা ড্রাগ এডিক্ট হয়ে পড়েছিল কয়েকদিন আগে থেকেই তাকে শুধরানোর জন্য তিনি আর তার স্ত্রী চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু মেয়েটা খিটখিটা হয়ে গিয়েছিল। ভালো কথাতেও চটে যেতো। অহেতুক রেগে যেতো,
সেদিন তুবা মিষ্টি নিয়ে এসেছিলো ছোট ভাইয়ের খৎনার। আরুশিকে দেখে তুবা কিছুটা জোড় করে মিষ্টি খেতে।ব্যাস আরুশি রেগেমেগে ছুড়ি নিয়ে তুবাকে শেষ করে দেয়।
নুহাশ সাহেব ভেবেছিলেন মেয়েটার অবস্থা এমনিতেই তেমন ভালোনা। মামলা খেলে শাস্তি নিশ্চিত।তাই সব দোষ আয়ুশির কাঁধে তুলে দেন। কিন্তু তাতেও কাজ হলোনা।
আয়ুশির ও শাস্তি হলো। ছোট্ট আয়ুশি জানেও না তার সাথে কি হতে চলেছে।
কিন্তু যেদিন মা-বাবা তাকে জেইলে রেখে চলে আসেন সেদিন তার কি কান্না। তাও আয়ুশির ছোট্ট মস্তিষ্কের আন্দাজের বাহিরে ছিলো সব।
নুহাশ সাহেব বুঝিয়ে সুজিয়ে রেখে যান আয়ুশি কে। তিনি আয়ুশিকে বলেন,
>>তোমাকে এখানে থাকতে হবে কয়েকদিন। তাহলেই গিফট পাবে। গিফট টা বেশ বড় আর দামী। যদি তুমি এখানে ভালো বাচ্চাদের মত থাকো তবেই পাবে।
বাপির কথা আয়ুশি ভালোভাবে বুঝে নেয়। সে ভালোভাবে থাকার চেষ্টা করে এখানে। জেইলে সব বাচ্ছাই বড় আয়ুশিই সবার ছোট তাই জেইলের কর্মকর্তা রা ওকে বেশ আদরে রাখে। কিন্তু কিছু বাচ্চারা তা দেখে হিংসে করে আর পরে আয়ুশিকে একা পেলে মারে।
আয়ুশি মা-বাবার জন্যে রোজ কাঁদে।
মা-বাবা রোজ আসতো তাকে দেখতে।
এভাবে মাস দুয়েক পেরিয়ে যায়।কিন্তু হুট করেই একদিন তারা আসা বন্ধ করে দেয়।
চলবে..
স্মৃতির_মাঝে,,,
';
(function() {
var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true;
dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js';
(document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq);
})();
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
💓আসসালামু আলাইকুম প্রিয় ভিউয়ার্স💓 👉দয়া করে আপনার মূল্যবান মতামত জানালে আমরা আপনার প্রতিকৃতজ্ঞ থাকব 🙏